Dec 13, 2007

সমাবর্তন-৪: স্নাতক সম্মানধারী!

৫ তারিখ খুব সকালেই গাউন আর আইডি কার্ডের জন্য ভার্সিটি গিয়ে আমরা হাজির। সোহাগ আর ফেকুকে এত সকালে ঘুম থেকে তোলা যাবে প্রথমে কেউ আশা করি নাই। অফিস জীবন সবাইকেই কিছু পরিবর্তন করেছে। ৮ টার মধ্যে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে!!

লাইনে দাড়ানো মাত্রই ফটো-সেশন শুরু হল। যথারীতি ধাক্কা-ধাক্কি করে লাইনে সবাই নিজের অবস্থান

পুনঃপুনঃপ্রতিষ্ঠিত করল। গাউন জোগাড় হবার পরে তানভীর স্যারের দর্শন নিতে গেলাম। দর্শন শেষে নিচে নেমে জাফর স্যারের সাথে ফটো-সেশন। সাথে টুকরো, টুকরো আড্ডা তো চলছেই। লাঞ্চে ১৫-১৬ জন মিলে বৈশাখীতে খেলাম। এরপর দুপুরে বিরক্তিকর rally প্র্যাক্টিস করালো। দিনটাও খুব দ্রুত কেটে গেলো।

পরদিন কনভোকেশন। দেড় ঘন্টা rally লাইনে দাঁড়িয়ে মেজবা rally sort algorithm আবিষ্কার করে ফেললো। এরপর দুই ঘন্টা চেয়ারে বসে ঝিমোবার পরে রাষ্ট্রপতি মহোদয় আসলেন। আমরা গ্রাজুয়েট ঘোষিত হলাম। এরপর শুধু ক্যামেরার শাটারের শব্দ মনে পড়ছে।

শেষ বিকেলে সিনিয়রদের সাথে আড্ডাটা অনেকেরই মনে থাকবে। জহির স্যার, তৌফিক ভাইদের মত সিনিয়ররা আড্ডায় ছিলেন। বিভিন্ন প্রসঙ্গে কয়েকজন স্মৃতিচারণ করলেন। দিদার ভাইয়ের জন্মদিন ছিল এদিন।

*****************************************************

অপুর জন্যে আমরা :

সমীর বিশ্বাস অপু। সি. এস.ই পরিবারের ২০০১ ব্যাচের সদস্য। শিকড়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। একজন ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড়ও। দূরারোগ্য ব্যধি প্লাষ্টিক অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত। বাঁচতে হলে প্রয়োজন মাত্র ২০ লক্ষ টাকা।

দায়িত্ববোধ জীবনের খুব বড় একটি ব্যাপার। অপু আমাদেরই ছোট ভাই, আমাদের আপন পরিবারএই অনুভূতিই আমাদের জেগে থাকা উচিত।

মাত্র ২০ লক্ষ টাকার জন্যে অপুর জীবনের চাকা থেমে যাবে? পরিবারবোধ পরাজিত হবে? অপুর হাত কি আমরা চির-অন্ধকার জগতের জন্যে ছেড়ে দিবো?

*******************************************************

কনভোকেশন রাতে আমরা ফেয়ারওয়েল পার্টিতে জড়ো হলাম চৌহাট্টা আল-হামাদান রেষ্টুরেন্টে। বিদায় ঘন্টা ক্ষীণ স্বরে বাজতে শুরু করেছে। অনেকের অফিস শনিবার! ছাত্রত্ব অনুভূতি ত্যাগ করে আবার কর্মস্থলে ঢুকতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতেই তারা সিলেট ছেড়ে রওনা দিলো।

পরদিন ইউনিভার্সিটিতে সার্টিফিকেট তুলবার পরে বিশ্বদার সাথে দেখা। ডি-বিল্ডিং এর সামনে ভাবীকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। সামনে যাবার পরেই বললেন, সুনামগঞ্জে যখনই আসি, ফেরত যাবার পথে রিক্সা করে ইউনিভার্সিটিতে একবার ঢুঁ মেরে যাই। গোল চত্বর থেকে এ-বিল্ডিং একবার রিক্সা দিয়ে ঘুরেই ভার্সিটি থেকে বের হয়ে পড়ি। রিক্সা থেকে নামি না। অথচ এইবার যেতে ইচ্ছা করছে না।

[আগামী কিস্তিতে সমাপ্য।]






অপুঃ আবার কোন একদিন ক্রিকেট খেলবে










সমাবর্তন-৩: আমার মধ্যেই তার বসবাস

সিলেটে আমি যে রুমে থাকতাম সেখানে এখন ফিজিক্সের রাজী থাকে। প্রতিবার ঢুকলেই একটা ধাক্কা মত খাই। শুধু সময়, মানুষ আর কিছু বাড়তি জিনিস বদলে গেছে। দেয়ালের সাথের দেয়াল-ঘড়িটা সেই একই আছে। এই ঘরের ফ্লোরের প্রতি ইঞ্চিতে আমার পদ-চিহ্ন আছে। বারান্দার গ্রিল দিয়ে এক ঝলক রাস্তা আর আমার চোখের স্মৃতিও অভিন্ন।

বারান্দায় গেলেই অদ্ভুত কিছু স্মৃতি নাড়া দেয়। ৩/২-তে থাকতে রাস্তার উলটো পাশের চটপটি দোকানে খেয়ে জন্ডিস বাঁধালাম। দেড় মাস ঢাকায় থেকে সুস্থ হয়ে যখন ফেরত আসছি তখনও শরীর কিছুটা দূর্বল। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে ৫/৬ দিন বাকি। আইপি আর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্যে চোখে অন্ধকার দেখছি (চশমা সহ)। এই সময় আমার সঙ্গী হিসেবে বারান্দায় আবির্ভূত হল একটি কবুতর। ২০ মিনিটের মধ্যে চাল দিয়ে এটাকে পোষ্‌ মানিয়ে ফেললাম। ঘরের জানালায় সে আশ্রয় নিল। কবুতরটা বৃদ্ধ, সাথে ঘুম-কাতুরে ছিল। হয় ঘুমাতো নাহয় ঢুলু ঢুলু চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত। আইপি পড়তে পড়তে যখনই বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছাতাম, তখন আমিও দরজায় হেলান দিয়ে কবুতরের পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতাম। দুপুরের কড়া রোদ কিংবা বিকালের শেষ আলো কিছুই আমাদের বিরক্ত করতো না। বারান্দায় গিয়ে দাড়ালেই ওটার কথা মনে হয়।

বড় বারান্দায় এইবারও ভাঙ্গা চেয়ারটাকেই পেলাম। এই চেয়ারের বয়স কমপক্ষে ৭ বছর। সাফায়েত কিনেছিল। ওরা চলে যাবার পরে চেয়ারটির জায়গা হয় বারান্দায়। ঝড় হোক বা বৃষ্টি-- এটাতে বসেই আমাদের মেসের নওজোয়ান সদস্যরা ডিজুসের ফ্রি মিনিটের সর্বোত্তম ব্যবহার করত। গ্রামীণ ফোণ কর্তৃপক্ষ যদি চেয়ারটির আত্ম-ত্যাগের কাহিনী শুনতেন তাহলে নিশ্চয়ই লোগোর অল্প একটু জায়গা জুড়ে এটি স্থান পেত। ঃ) ঃ-)

সিলেটে এই প্রথম ট্যুর যেবার নাতির সাথে দেখা হল না। বহুবার, বহুসময় ওর বাসায় গিয়েছি। কিন্তু, এইবার গিয়ে আন্টির সাথে দেখা করা একেবারেই ভিন্নরকম। একধরনের নিঃসঙ্গতা বোধ করলাম ওর বাসায় গিয়ে। সাথে মিস করেছি সাবু, বিডি, হীরাকে।

এই কিস্তিতে আব-জাব লেখা একটু বেশী হয়ে গেছে। কনভোকেশন প্রসঙ্গ পরবর্তী কিস্তির জন্যেই তোলা থাকলো।

৭ তারিখ রাতে ভার্সিটি থেকে যখন শেষবারের মত ফেরত আসছি তখন রোড টু ইনফিনিটিকে খুব ছোট মনে হল।

[৫ম কিস্তিতে সমাপ্য।]









সমাবর্তন-২: আবারও সিলেট!

এইবার সিলেটে যাবার জন্যে ৩৪ জনের একটা চিল্লা-চিল্লি গ্যাং গঠন করা গেলো। তানিম থাকাতে শুরু থেকেই সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম বেশ রাত পর্যন্ত দাঁত কেলানো যাবে। যথারীতি, ঘন্টা-খানিকের মধ্যেই আমাদের বগি অন্য বগির যাত্রীদের মনোঃ-কষ্টের এবং ঘুম-কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ালো। টিকেট-চেকারের মাধ্যমে তারা হুমকি দিলো, চিল্লা-মিল্লি না থামাইলে ট্রেন অবরোধ করা হবে। শোনার পরে ৩০ সেকেন্ডের মত বগি অবশ্যি শান্ত ছিল।

প্রথম দিন পোস্টালের রেস্ট হাউসে উঠলাম। পরদিন মদিনা মার্কেট। সিলেটে আমরা যারা ৯/বি, পাঠানটুলায় থাকতাম, তাদের জন্যে চাচার টং ছিল ফরজীয় লেভেলের রুটিন। শেষদিকে প্রতিদিন সেখানে বিরাট আড্ডা বসত। শামসীর & রসি ভাই(গ্রামীণ ফোনের কল্যানে রসি ভাই তখন সিলেটে), শিহাব, সাইফুল, মনীষ, শিবলী, রনি, অমিত, সাদী, শিবাজী, সজীব(01) ..., আর আমরা ৯/বি, মির্জা ভিলা। ফুটপাত হকার উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে সেই বড় টং আর নেই। তার বদলে চাচার চ্যাং টং এখন ছোট্ট একটি দোকান হয়ে ঠিক আমাদের ৯/বি বাসার গেটের পাশেই আশ্রয় নিয়েছে। মদিনা মার্কেটে নেমেই বাসায় ঢুকবার আগে চাচার খোঁজ নিলাম। ভালোই আছেন। সেদিন রাতেই ছোট আরেকটা আড্ডা বসে গেল। অপরিহার্য সূরা সদস্য শামসীর & রসি ভাই সহ!

[চলবে]
















সমাবর্তন-১: নস্টালজিয়া?

আবার পুরোনো শহরে সবাই একসাথে হলাম। পাস করবার পরে ২-৩ বার সিলেট গিয়েছি। কিন্তু, এইবারের মত এত নস্টালজিয়া কখনো চেপে ধরে নাই। নস্টালজিয়ার ধাক্কায় ভার্সিটির আনাচে-কানাচের ছবি পর্যন্ত তুলে ফেলি। টং, এখানে ময়লা ফেলুন, রোড টু ইনফিনিটি, ক্লাস-রুম, আমাদের নোটিস বোর্ড।

অবশ্য, অনেকেরই অবস্থা আমার মত। একসাথে জড়ো হওয়াতে মনে হচ্ছিল সবাই এখনো আগের মতই ছাত্র। অডিটোরিয়ামের দরজা খুললেই পরীক্ষা দিতে ঢুকবো।

শুধু মাঝখান থেকে কেটে গেছে দেড়টা বছর।

[চলবে]













Oct 9, 2007

স্বপ্নচর্যা

“চুল ধরে এত জোরে টান দিও না আপু, ব্যথা পাই তো”- তিন বছরের বাবুনি নামের যে পিচ্চিকে উদ্দেশ্য করে শ্যামলী এই কথাগুলো বলল- ওর পক্ষে অনেক সময় এটা বোঝা অনেক সময় কষ্টই হয়ে যায় যে চুল ধরে টান দিলে কেউ ব্যথা পেতে পারে। বাবুনিকে এই কথা বলে শ্যামলী এখন ওকে ঘিরে বসে খাকা বাচ্চাদের দিকে নজর দিল। আর বাবুনি এবার ওর চুল ছেড়ে দিয়ে ঘাড় বেয়ে কাঁধে উঠে বসার চেষ্টা করতে লাগল।

“আপামনি, অংকটার এইখানে আটকাইয়া গেছি—এরপর করে দিয়া যাও।”- একটু দূরে আরেকটা জটলায় বসে থাকা টুম্পা শ্যামলীকে ডেকে বলল। এখানে যারা পড়তে আসে তাদের মধ্যে টুম্পাই সবচেয়ে বড়। কাছের একটি হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে-সায়েন্স গ্রুপে। প্রতিদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে সামান্য কিছু মুখে দিয়েই ও চট করে চলে আসে এই ভার্সিটির স্কুলে। কারণ, দেরি হয়ে গেলে ভাইয়া-আপুদের তো আর পাওয়া যাবে না। তখন ও ওর এত কঠিন কঠিন পড়া কার কাছ থেকে বুঝবে। বাসায় তো ওর জন্য কোনো প্রাইভেট টিউটর ওর আব্বু রাখতে পারবে না ।

“শ্যামলী আপু- আমার বর্ষাকাল রচনা লেখা শেষ, একটু দেখে যাও”- ক্লাস সিক্সে পড়া আসমা শ্যামলীকে ডাকল। আসমা ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিল।
“তোমার বাবা রচনাটা স্কুলের স্যারকে দেখিয়েছ”- শ্যামলী আসমাকে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ,স্যার খুব খুশি হল। আমাকে দশে দশ দিল। বলল- মা,এই রচনা তুই নিজে লিখেছিস। কেউ লিখে দেয় নাই? আমি যখন বললাম আমি নিজে লিখছি তখন স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া করল। আর আমাকে ঠিকঠাকভাবে লেখাপড়া করতে বলল। বলল- মা, আমি দোয়া করি তুই লেখাপড়া কইরা অনেক বড় হ।”

“আমিন, তোমার খবর কি?ঠিকঠাকমত Passage টার বাংলা করতে পারছ?”- শ্যামলী জিজ্ঞেস করল।
-“আপু, forever মানে কি”
-“চিরতরে মানে চিরদিনের জন্য”

এই আমিন হচ্ছে আসমার ছোটভাই-আসমার এক ক্লাস নিচে পড়ে-আসমার মতই ভালো ছাত্র।সেও তার বন্ধুদের নিয়ে স্কুল ছুটির পরেই ভার্সিটিতে চলে আসে- এখানে পড়াশোনা করে সামনের মাঠে খেলে তারপর বাসায় যায়।

আমিন এবং আসমার বাবা রিক্সা চালান- বয়স বেশি হওয়ায় প্রায়ই তাকে অসুস্থ থাকতে হয়। একবার তিনি একটা মাইক্রোবাসের সাথে এক্সিডেন্ট করে প্রায় একমাস ধরে অসুস্থ ছিলেন।সেই সময় আসমা ও আমিনের স্কুলে ভর্তির টাকা জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। তিনি টাকার জোগাড় করতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন-ভেবেছিলেন তার প্রাণের টুকরা দুইটাকে আর বোধ হয় পড়ালেখা করাতে পারলেন না। ঐ সময় ভার্সিটি স্কুলের ভাইয়া আপুরা মিলে চাঁদা তুলে আসমা ও আমিনকে স্কুলে ভর্তি করে। সেইজন্য তাদের কাছে তার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।

এই বাচ্চারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের গ্রামগুলোতে বাস করে। এদের কারও বাবা-মা হয়ত দিনমজুর, কেউ হয়ত রিক্সা চালায়, কেউ হয়ত মানুষের বাসায় কাজ করে, কেউবা ছোট কোন ব্যবসা করে। এদের অনেকেই নিজেদের সন্তানদের হয়ত কোনোভাবে একটু স্কুলে পাঠাতে পারেন। নিজের সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছেলেমেয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলে এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে এইসব বাচ্চাদের পড়াশোনায় সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দিকে সবার অনেক আগ্রহ থাকে, অনেক কমিটি হয়, কোন টিচার কাদেরকে পড়াবে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়, সপ্তাহে কোন দিন কোন বিষয় পড়ানো হবে, কোনদিন বাচ্চাদের গান আর নাচ শেখানো হবে- এসব ব্যাপারে অনেক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছুদিন পর বেশিরভাগেরই আগ্রহটুকু মিইয়ে আসে। সব প্ল্যান-প্রোগ্রাম ভেস্তে যায়। তবে স্কুলটি একেবারে থেমে যায় না। কারণ, শ্যামলীর মত কেউ কেউ স্কুলটিতে নিয়মিত আসতে থাকে। স্কুলটির মধ্যে, স্কুলটির দুরন্ত সব বাচ্চা-কাচ্চাদের মধ্যে তারা জীবনের নতুন এক মানে খুঁজে পায়।

ইউনিভার্সিটির স্কুলটিতে যে বাচ্চা-কাচ্চারা পড়তে আসে তারা প্রায় সবাই একদমই পিচ্চি।এদের অনেকেই হয়ত এখনও স্কুলে যেতে শুরু করেনি-বেশিরভাগই হয়ত প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। এদের শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভ যে পরিমাণ যত্ন দাবি করে, সে পরিমাণ যত্ন স্বাভাবিকভাবেই এরা এদের পরিবারের কাছ থেকে পায় না। ভার্সিটির স্কুলটিতে যদি যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষকের যোগান থাকত তাহলে এই যত্নের অভাবটুকু হয়ত কিছু পরিমাণে পূরণ করা যেত। কিন্তু শিক্ষকের সংখ্যা যেহেতু প্রায় সময়ই অনিয়মিত এবং অপ্রতুল থাকে-তাই শ্যামলী, সাকিফ, রেণুকা, জুঁই-যারা মোটামুটি নিয়মিত স্কুলটিতে আসার চেষ্টায় করে- তারা এ সময়টুকু যেসব ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী-তাদের পেছনেই দেয়ার চেষ্টা করে। আর বাকিদের থাকে দুষ্টুমির অখণ্ড অবসর। এখানে যেহেতু কাউকেই মার বা বকুনি দেয়া হয় না-তাই বাচ্চাকাচ্চারা সাধ মিটিয়ে দুষ্টুমি করতে পারে। তাই প্রায়ই দেখা যায় একদিকে ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে- আর অন্যদিকে হয়ত অন্যরা ছোটাছুটি করে বরফপানি খেলছে-কেউ কেউ হয়ত জানালার গ্রীল বেয়ে উপরে উঠছে- কেউবা টো টো করে সারা বিল্ডিং ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলো হয়ত কখনও কখনও সমস্যা তৈরি করে-তবু্ও শ্যামলীরা বাচ্চাকাচ্চাদের খুব বেশি শাসনে আগ্রহী হয় না। শিক্ষা ঠিকঠাকমত দিতে না পারুক-বাচ্চাদের আনন্দে যেন কোনো ঘাটতি না পড়ে।

ঠিক এ রকম সময়ে একটি খুব ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন অত্যন্ত স্বনামধন্য ও জনপ্রিয় শিক্ষক ড: মোজাফ্ফর একটি ছোট নোটিশ দেন-
“এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি অত্যন্ত অমানবিক এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য হচ্ছে- একটি ছোট কিশোর ছেলে একটি রিক্সা টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর তার রিক্সায় চড়ে দুই বা তিনজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ যাচ্ছে। রিক্সা চালানোর মত এত কঠিন পরিশ্রমের একটি পেশা এই কিশোরদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের কাছ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ যা কিনা এই দুর্ভাগা শিশু-কিশোরদের এই কঠিন বাস্তব খেকে মুক্তি দিয়ে একটি বিকাশমান জীবন নিশ্চিত করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক ব্যয় একটি গবেষণা সংস্থার গবেষণা অনুদান থেকে সরবরাহ করা হবে।”

এই নোটিশটি চোখে পড়ার পর শ্যামলী, রেণুকা, সাকিফ আর জুঁই তাদের আরও কয়েকজন সমমনা বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষককে সংগে নিয়ে ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে থাকে এবং অনেক খেটেখুটে একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়। প্রস্তাবটি ড: মোজাফ্ফরের পছন্দ হয়-তখন সকলে মিলে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে থাকে।

প্রস্তাবটির মূল বিষয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে একটি সুবিধাজনক জায়গায় একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারী সুপারশপ গড়ে তোলা যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবে। একজন অত্যন্ত দক্ষ এবং খাঁটি লোককে ঐ সুপারশপের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং এতে ঐ শিশু-কিশোররা ফ্যাসিলিটেটর বা সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। এই সুপারশপে শিশুদের কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যাতে তারা এর পাশাপাশি তাদের সাধারণ এবং কারিগরি শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে এবং তাদের জীবনের সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত হয়। সুপারশপের পরিচালনা পর্ষদ তৈরির জন্য স্বেচ্ছাসেবক আহ্বান করে ড: মোজাফ্ফর পুনরায় একটি নোটিশ দেন। এবার নোটিশটি লিফলেট আকারে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিলি করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউর মাধ্যমে দশজন ছাত্রছাত্রীকে এক সেমিস্টারের জন্য পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন ড: মোজাফ্ফর। সুপারশপের ম্যানেজার পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য।সুপারশপের পরিচালনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা পরিচালনা পর্ষদের মূল দায়িত্ব। শ্যামলী, সাকিফরাও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ায় ভার্সিটি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমকে এই শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত করে তারা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে। এখন মোটামুটি ১০ জন শিক্ষকের সার্বিক উপস্থিতি থাকাতে শিক্ষা কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়।

এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। শ্যামলীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যার যার জীবন নতুন করে শুরু করেছে। শ্যামলীর বিয়ে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষকের সাথে। সে নিজেও চাকরি নিয়েছে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। তার কোল আলো করে ফুটফুটে দুই কন্যা সন্তান এসেছে। তারা বড় হয়েছে- স্কুল-কলেজ পাশ করে এখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। একবার কি একটা কাজে শ্যামলী ইউনিভার্সিটিতে তার মেয়ের ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করছে। ক্লাস শেষ করে ম্যাডাম স্টুডেন্টদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। ওই তো তার বড় মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
“আপা, কিছু মনে করবেন না-আপনার নাম কি শ্যামলী?”-তরুণ শিক্ষিকা শ্যামলীর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল।
“ম্যাডাম, আপনি আমার মাকে চেনেন”-বিস্মিত বড় মেয়ে, সোমা যার নাম, পাল্টা প্রশ্ন করল।
“কিন্তু আপনি?”-অবাক শ্যামলী অপরাধী স্বরে জিজ্ঞেস করল।
-আপু, আমি আসমা।
-আসমা?
-ঐ যে আপনারা ভার্সিটিতে থাকতে পড়াতেন।
শ্যামলী এবার আসমাকে প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরল। আসমা শ্যামলীদের নিয়ে টিচার্স ক্যান্টিনে বসল। জোর করে কত কি যে খাওয়াল। আর কত কত যে গল্প করল।
-জানো আপা, আমিন না এখন সুনামগঞ্জের ডিস্ট্রিক্ট জাজ্
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ,কি সুন্দর একটা মেয়েকে যে বিয়ে করেছে। বউ আবার ডাক্তার
-তো তোমার হাসবেন্ড কি করে?
-আরে উনি তো আমাদের মিথুন স্যার- সোমার চটপট উত্তর।
-আমরা ক্লাসমেট ছিলাম-আসমা যোগ করে।
-আপা বাবুনির কথা মনে আছে?
-মনে থাকবে না আবার-আমার ঘাড়ে উঠে বসে থাকত।
-ও এখন তোমাদের ডিপার্টমেন্টে পড়ে-যা স্মার্ট হয়েছে না!এথন যেসব স্টুডেন্টরা বাচ্চাদের পড়ায় ও তাদের লিডার। প্রতিমাসে আমরা সবাই বাচ্চাদের জন্য ওর কাছে টাকা পাঠাই।
-তাই নাকি? খুব ভালো,খুব ভালো বলতে বলতে টুম্পার চোখে জল চলে আসে। সে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে চট করে চোখের কোণা মুছে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে-টুম্পার খবর কিছু জানো?
-জানব না কেন-এক এস.পি-এর সাথে বিয়ে হয়েছে-এখন দিনাজপুর থাকে-ওখানকার কলেজে পড়ায়।
-বাহ্, সব্বাই কত ভালো আছে।
-এ সবই হয়েছে আপু তোমাদের জন্য। তোমরা যদি তখন ঐভাবে আমাদের না পড়াতে, আমাদের পড়াশোনার যত্ন না নিতে-তাহলে কি আমরা আজ এখানে আসতে পারতাম-বলতে বলতে কেঁদে ফেলে আসমা। কাঁদতে কাঁদতে বলে-বাংলাদেশের সব ইউনিভার্সিটিতে যদি স্টুডেন্টরা এই কাজ করে তাহলে আরও কত কত আসমা, আমিন আর বাবুনির ভাগ্য বদলাতে পারে বল। তাই আমি সবসময় আমার ক্লাসে তোমাদের কথা বলি-আমি কোন জায়গা থেকে কাদের কারণে উঠে এসেছি সেই কথা বলি-এমনকি আমার বাবা যে একজন রিক্সাওয়ালা ছিলেন সেই কথা বলতেও ভুলি না। যদি আমার কোন ছাত্র বা ছাত্রী আমার গল্প শুনে একটু অনুপ্রাণিত হয়-নিজের জীবনের সামান্য কিছু অংশ অন্য কারও ভালোর জন্য উৎসর্গ করতে উৎসাহী হয়।

Oct 1, 2007

ভার্চুয়াল রেডিও

মোবাইলে ইন্টানেটের মাধ্যমে রেডিও শোনার একটি চমৎকার এবং সম্পূর্ণ ফ্রী সফটওয়্যার হচ্ছে ভার্চুয়াল রেডিও। সিম্বিয়ান সাপোর্টেড যে কোন মোবাইলে এটি ইনস্টল করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে অবশ্যই আনলিমিটেড ইন্টারনেট থাকতে হবে। নিচের লিংক থেকে এটি ডাউনলোড করতে পারবেনঃ
http://www.getjar.com/products/11925/VirtualRadio

ভার্চুয়াল রেডিওর অফিসিয়াল সাইট হচ্ছেঃ
http://www.vradio.org

নিচের লিংকটিতে আপনি সাপোর্টেড সকল মোবাইলের একটি লিস্ট পাবেনঃ
http://www.vradio.org/buy.php

আমি বেশ কিছুদিন থেকে আমার নোকিয়া ৬৬৮০ এর মাধ্যমে রেডিওটি শোনে আসছি। সিলেটে গ্রামীনের ইন্টারনেটের স্পীড খুবই ভাল - 18kbps-22kbps ডাউনলোড স্পীড সব সময় পাই। ফলে ভার্চুয়াল রেডিওতে হাই কোয়ালিটির মিউজিক শোনতে পারি। তবে দুঃখ ছিল এটাতে বাংলা কোন চ্যানেল নাই। কিছুক্ষণ আগে ভার্চুয়াল রেডিও এর মডারেটরকে ইমেইল দিয়ে বাংলা চ্যানেল যুক্ত করার জন্য অনুরোধ করি এবং মডারেটর সাথে সাথে ৩ টি বাংলা চ্যানেল যুক্ত করে। চ্যানেলগুলো হচ্ছে -

Bangladeshconnection Radio --> in Asian - Wi-fi/3G section
Classic Music From Bangladesh --> in Asian section
WASHINGTON BANGLA RADIO --> in Asian section

যাদের মোবাইলে আনলিমিটেড ইন্টারনেট আছে তারা এই রেডিওটি টেস্ট দেখতে পারেন, আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগবে।

Jun 5, 2007

টেলিফোন বিড়ম্বনা

আমরা তখন সিলেটে ঈদগার একটা মেসে থাকতাম। আমি, রিয়াদ, কামরুল, শামীম, সাজ্জাদ। বিশ্ববিদ্যালয় তখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। সাজ্জাদ ঢাকায় চলে গেছে। আমরা বাকিরা আছি সিলেটে। মাসের শুরুতে বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়লাম। সাজ্জাদ তো ঢাকায়, ওর টাকা কেমনে ম্যানেজ করি? আমরা তখনও কেউ টিউশনি করি না, টাকাপয়সার টানাটানি। এমন সময় যেন ঈদের চাঁদ দেখতে পেলাম, সাজ্জাদ ঢাকা থেকে টেলিফোন করেছে। আমি ওরে বললাম,
"সাজ্জাদ, এমাসের বাড়ি ভাড়ার টাকা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেও" ।
"সরি সজীব, এমাসটা ম্যানেজ কর। আগামী মাসে একবারে পাঠাবো"।
আমি একটু মন খারাপ করে বাকী পোলাপানদের বললাম, "ধুর, ওতো টাকা পাঠাবে না"।
আমি বলি, আর পোলাপান হাসে। আমি ভেবে পাই না, ওরা হাসতেছে কেন? আমার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।
হাসির রহস্য উন্মোচন হল পরদিন। পাশের টেলিফোনের দোকান থেকে সাজ্জাদ সেজে রিয়াদ আমাকে টেলিফোন করেছিল। আমি টেরই পাইনি। পরে ব্যাপারটা আমার কাছেও মজা লেগেছে।

ম্যারেজ ডে

একদিন আমি টিউশনিতে গেছি। পড়াতাম তিন পিচ্চিকে। বসার সাথে সাথে বিশাল খাবার দাবার চলে আসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার? মাঝেরটা লাফাতে লাফাতে বলল, স্যার আজকে আমার আম্মুর ম্যারেজ ডে। আমি বললাম খুব ভাল। ওনাকে কনগ্রেটস। তারপর দেরি না করে খাওয়ার দিকে মন দিলাম। অনেকক্ষণ পর, সবচেয়ে ছোটটা হঠাৎ বলে উঠল স্যার আজকে কিন্তু আমার আব্বুর ও ম্যারেজ ডে!

বি. দ্র. এইটা কিন্তু একটা জোক ছিল...

Jun 4, 2007

Can't view Bangla font?

If you can't view any bangla font at this website then you have to install unicode based bangla font into your computer. Download bangla font from this link: http://www.ekushey.org/?page/otf_bangla_fonts

You will find a nice bangla writing software from this site:
www.omicronlab.com

You will also find few instructions at this blog:
banglatest.blogspot.com

Jun 3, 2007

স্বাগতম !!!

সবাইকে বাংলা সাহিত্যের এই নতুন ভুবনে স্বাগতম। পাঠককে আনন্দ দানের মাধ্যমে বাংলা ব্লগের বিশাল সম্ভার তৈরি করাই হচ্ছে এই সাইটের মূল উদ্দেশ্য। যারা বাংলায় ব্লগ লিখতে ভালবাসেন তাদেরকে এই সাইটে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর লেখা আহ্বান করা হচ্ছে -

  • ছোট গল্প
  • কবিতা
  • রম্য রচনা
  • কৌতুক
  • মজার তথ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • নিজের কথা
লেখা একান্ত নিজস্ব হওয়া অত্যাবশ্যক নয় - সংগ্রহ বা অনুবাদ হতে পারে। যারা এই সাইটে লিখতে চান তারা আমার কাছে বাংলায় ইমেইল করুন এই ঠিকানায় : zakaria.cse@gmail.com । আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে এই সাইট।