সিলেটে আমি যে রুমে থাকতাম সেখানে এখন ফিজিক্সের রাজী থাকে। প্রতিবার ঢুকলেই একটা ধাক্কা মত খাই। শুধু সময়, মানুষ আর কিছু বাড়তি জিনিস বদলে গেছে। দেয়ালের সাথের দেয়াল-ঘড়িটা সেই একই আছে। এই ঘরের ফ্লোরের প্রতি ইঞ্চিতে আমার পদ-চিহ্ন আছে। বারান্দার গ্রিল দিয়ে এক ঝলক রাস্তা আর আমার চোখের স্মৃতিও অভিন্ন।
বারান্দায় গেলেই অদ্ভুত কিছু স্মৃতি নাড়া দেয়। ৩/২-তে থাকতে রাস্তার উলটো পাশের চটপটি দোকানে খেয়ে জন্ডিস বাঁধালাম। দেড় মাস ঢাকায় থেকে সুস্থ হয়ে যখন ফেরত আসছি তখনও শরীর কিছুটা দূর্বল। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে ৫/৬ দিন বাকি। আইপি আর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্যে চোখে অন্ধকার দেখছি (চশমা সহ)। এই সময় আমার সঙ্গী হিসেবে বারান্দায় আবির্ভূত হল একটি কবুতর। ২০ মিনিটের মধ্যে চাল দিয়ে এটাকে পোষ্ মানিয়ে ফেললাম। ঘরের জানালায় সে আশ্রয় নিল। কবুতরটা বৃদ্ধ, সাথে ঘুম-কাতুরে ছিল। হয় ঘুমাতো নাহয় ঢুলু ঢুলু চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত। আইপি পড়তে পড়তে যখনই বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছাতাম, তখন আমিও দরজায় হেলান দিয়ে কবুতরের পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতাম। দুপুরের কড়া রোদ কিংবা বিকালের শেষ আলো কিছুই আমাদের বিরক্ত করতো না। বারান্দায় গিয়ে দাড়ালেই ওটার কথা মনে হয়।
বড় বারান্দায় এইবারও ভাঙ্গা চেয়ারটাকেই পেলাম। এই চেয়ারের বয়স কমপক্ষে ৭ বছর। সাফায়েত কিনেছিল। ওরা চলে যাবার পরে চেয়ারটির জায়গা হয় বারান্দায়। ঝড় হোক বা বৃষ্টি-- এটাতে বসেই আমাদের মেসের নওজোয়ান সদস্যরা ডিজুসের ফ্রি মিনিটের সর্বোত্তম ব্যবহার করত। গ্রামীণ ফোণ কর্তৃপক্ষ যদি চেয়ারটির আত্ম-ত্যাগের কাহিনী শুনতেন তাহলে নিশ্চয়ই লোগোর অল্প একটু জায়গা জুড়ে এটি স্থান পেত। ঃ) ঃ-)
সিলেটে এই প্রথম ট্যুর যেবার নাতির সাথে দেখা হল না। বহুবার, বহুসময় ওর বাসায় গিয়েছি। কিন্তু, এইবার গিয়ে আন্টির সাথে দেখা করা একেবারেই ভিন্নরকম। একধরনের নিঃসঙ্গতা বোধ করলাম ওর বাসায় গিয়ে। সাথে মিস করেছি সাবু, বিডি, হীরাকে।
এই কিস্তিতে আব-জাব লেখা একটু বেশী হয়ে গেছে। কনভোকেশন প্রসঙ্গ পরবর্তী কিস্তির জন্যেই তোলা থাকলো।
৭ তারিখ রাতে ভার্সিটি থেকে যখন শেষবারের মত ফেরত আসছি তখন “রোড টু ইনফিনিটি”কে খুব ছোট মনে হল।
[৫ম কিস্তিতে সমাপ্য।]





0 টি মন্তব্য:
আপনার মন্তব্য দিন