Aug 29, 2008

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প

মাসিক "কম্পিউটার জগৎ" ম্যাগাজিনের গত তিনটি সংখ্যায় ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন লিখেছি। এরপর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ইমেইল পাচ্ছি। আমি চেষ্টা করি সবার ইমেইলে উত্তর দিতে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সবসময় ইমেইল করা হয়ে উঠে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একই ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করছে। পরিশেষে চিন্তা করে দেখলাম পাঠকদের জন্য একটি ওয়েবসাইট হলে সবার জন্যই ভাল হয়। সেই চিন্তা থেকে তৈরি করলাম একটি সাইট - ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প

সাইটির ঠিকানা হচ্ছে: www.FreelancerStory.blogspot.com

ইচ্ছে আছে নিয়মিতভাবে লেখার। আশা করছি সাইটি সকলে উপকৃত হবেন।

May 19, 2008

মাঝ আকাশের ধূমকেতু

ধূমকেতুরা হঠাৎ করে আসে, আর হঠাৎই চলে যায়। থেকে যায় শুধু ভাললাগা। তৃতীয় দিনের মত পরিচয়। নামটা এখনও জানি না। কিন্তু ক্ষণিকের ধূমকেতুও যে আমাকে আলোড়িত করতে পারে তা দেখে কিছুটা আশ্চর্যই হচ্ছি। বহুকাল পরে টিনএইজ সময়কার সেই উত্তেজনা আজ আনুভব করছি। সে একটা সময় ছিল, হা হা হা..., যাকে দেখতাম তাকেই ভাল লাগত আর সারাক্ষণ গাইতাম "মন কি যে চায় বল, যারে দেখি লাগে ভাল। এ মন কেন বাধা পড়েনা, কি যেন কেন জানি না।"

প্রথম দিনঃ
লাব্রেরীতে বসে পড়ছিলাম। আমার টেবিলে পাশের দুটি চেয়ারে দুটি মেয়ে অনেক্ষণ থেকে বকবক করছিল। তাকিয়ে দেখিনি, কিন্তু বুঝতে পারলাম বয়েস কম ২০-২২ হবে। বয়সে এখনও পরিপূর্ণতা আসেনি, পাশের লোকজনের যে পড়ায় বিঘ্ন ঘটছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। অতঃপর কি আর করা বইয়ের দিকে অকারণে তাকিয়ে থালাম আর ভাবছিলাম এরা কখন থামবে!

কিছুক্ষণ পর তৃতীয় চেয়ারে আরেকটা মেয়ে এসে যোগ দিল - ষোলকলা পূর্ণ হল আরকি। আড়চোখে তাকিয়ে বুঝলাম মেয়েটা বাকি দুজন থেকে বড়। মনে মনে ভরসা হল সে হয়ত বাকি দুজনকে একটু চুপ থাকতে বলবে। কিন্তু সেটা কি কখন সম্ভব - তিন মহিলায় যে হাট-বাজার সেটা আরেকবার প্রমাণ হল। শুনলাম সে মাস্টার্সে পড়ে এবং বাকি দুজনের সাথে আজি তার প্রথম পরিচয়। কিন্তু তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল অনেকদিনের পরিচয়।

একসময় লিসেনিং টেস্ট দেবার জন্য আমার পালা এল, হাঁফ ছেড়ে বাচলাম। কিন্তু পড়লাম আরেকটা বিপদে, সেদিনই প্রথম ব্রিটিস কাউন্সিলের সেলফ এক্সেস সেন্টার (স্যাক) বা লাইব্রেরীতে এসেছি। বুঝতে পারছিনা কোন বই থেকে লিসেনিং টেস্ট দিব। অতগ্যা উপায় না দেখে প্রথম মেয়ে দুটিকে জিজ্ঞেস করলাম। তাদের মধ্যে একজন আমাকে একটা বই সেলফ থেকে এনে দিল।

টেস্ট দিলাম, একঘন্টা সময় লাগল। ৪০ মার্কসের মধ্যে ৩৭ পেলাম। প্রথম টেস্টে এতটা আশা করি নি। সে যাইহোক, খুশি মনে আগের চেয়ারটাতে এসে বসলাম। মেয়েরা তখনও বকবক করছিল। আমি কিছু বলছিলাম না, নিজ মনে আরেকটা বই পড়ছিলাম। মিনিটখানেক পর প্রথম মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, "কত মার্কস পেয়েছ?"। অপরিচিত কাউকে যে আপনি করে বলতে হয় সে জ্ঞানটুকু নেই, অপরিনত বয়স বলে ক্ষমা করে দিলাম। বললাম, "৩৭"। "৩৭ ?!? দেখি তোমার খাতা"। তার এতটা উচ্ছ্বাস দেখে মনে মনে হাসলাম আর খাতাটা তার দিকে দিলাম।

তৃতীয় মেয়েটা এই প্রথম আমার সাথে কথা বলল,
"কিভাবে এত মার্কস পেলেন?"
আমি এই প্রথম তার দিকে তাকালাম, আপনি করে বলায় তার পরিপূর্ণতা নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকল না, "জানি না, প্রথমবারে ৩৭ পেয়েছি, আর পাব বলে মনে হয়না। "
"কি বলেন? প্রথমবারেই ৩৭? কিভাবে সম্ভব? "
"তাতে কি হয়েছে, পরেরগুলোতে এরকম নাও পেতে পারি। "
"আপনি পাবেন। আপনি এখন কিসে পড়েন?"
"আমি ২ বছর হল শাবিপ্রবি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রেজুয়েশন করেছি। "
"তাহলে তো আপনি খুবই ভাল ছাত্র। IELTS এর কোর্স করেছেন কোথা থেকে?"
"ITSE থেকে, তাও আবার দুবছর আগে। "
"সবই দেখি দুইবছর আগে করেছেন!"
"হ্যাঁ, পাশ করার পর পরই কোর্সটা করেছিলাম কিন্তু জব এর কারণে আর ফাইনাল টেস্ট দেয়া হয়নি।"
"এখন কোথায় জব করছেন?"
"আমার একটা সফ্টওয়্যার ফার্ম আছে।"
"স্যরি", আমার কথা বুঝতে পারেনি, ২৬-২৭ বয়সের একজন লোকের যে নিজস্ব একটা সফ্টওয়্যার ফার্ম থাকতে পারে তা বেশির ভাগ লোকেই প্রথমবার বললে বিশ্বাস করতে চায় না। ভাবে আমি ঠিক করে বলতে পারিনি, না হয় তারা ঠিক করে শুনতে পারেনি। সে যাই হোক আমি তাকে আবার বললাম। সে বলল "ও"। আমি নিশ্চিত সে এবারও বুঝতে পারেনি।

প্রথম মেয়েটা এইবার আমার দিকে অপরাধ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলল, "ভাই আমি দুঃক্ষিত, আমি আপনাকে তুমি করে বলে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারিনি আপনি অনেক সিনিয়র। আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাদের সমবয়সী।" আমি বলাম, "ঠিক আছে কিছু হবে না। আপনারা দুজন কোথায় পড়ছেন?" "আমি মহিলা কলেজে এবং আমার বান্ধবী ল কলেজে, দুজনই প্রথম বর্ষে।" কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর প্রথম দুজন চলে গেল। যাক এইবার একটু পড়া যাবে। কিন্তু না, সেটা মনে হয় আজ আর হবেনা। তৃতীয় মেয়েটার চোখেমুখে ঘোর তখনও কাটেনি, একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছে। যেহেতু কথাগুলো আমাকে নিয়েই হচ্ছে তাই ভালই লাগছিল শুনতে।

দ্বিতীয় দিনঃ
লাইব্রেরীতে এসে দেখলাম এখনও তেমন কেউ আসেনি। নিরিবিলি একটা জায়গা দেখে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। মনযোগে বিঘ্ন ঘটল পাশের চেয়ার টানার শব্দে। বলল, "Hi" - মুখে প্রশস্থ হাসির রেখা। "কেমন আছেন?" "ভালই, আপনি?" "এইতো"। মনে হচ্ছে আজ আর কোন পড়া হবে না। আমাকে নিয়ে তার ঘোর এখনও কাটেনি, "আপনি খুবই ভাল ছাত্র।"
"না না, এতটা ভাল নই", তাকে শান্ত করার জন্য বললাম।
"তাহলে কম্পিউটার সায়েন্সে চান্স পেলেন কিভাবে?"
"চান্স পেয়েছি, কিস্তু আপনি যতটা ভাল ছাত্র মনে করছেন ততটা আসলে নই।"
"তাহলে লিসেনিং টেস্ট এ ৩৭ পেলেন কিভাবে?", বুঝতে পারলাম কথাটা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। লক্ষণ ভাল ঠেকছে না। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললাম, "এটা কোন ব্যাপার না। ওই টেস্টটা সহজ ছিল। আর আমি প্রায়ই ইন্টারনেটে বিবিসির খবর শুনি। এটা গত এক বছরে চেষ্টার কারণে হয়েছে। "
"ও তাইতো বলি, তাহলে তো আপনি পারবেনই।" শুনে আশ্বস্ত হলাম। "তবে আপনি কিন্তু সত্যি ভাল ছাত্র, আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।" কম্প্লিমেন্ট শুনে আমি আর কিছু বলাম না, হাসলাম।

ওইদিন লিসেনিং টেস্টএ ৩৩ পেলাম। খারাপ করায় মনে মনে খুশি হলাম, আমাকে অন্তত মহামানবের পর্যায়ে আর ফেলতে পারবে না। মার্কস শুনে সে বলল, "অনেক ভাল করেছেন, আমি তো কখনও ২৯ এর উপর যেতে পারি নি। প্রথমটাতে আবার পেয়েছিলাম ২৩। আমাকে দিয়ে হবে না। আচ্ছা আপনি কি জব থেকে ছুটি নিয়েছেন?"

আমার ধারণাই সত্যি হল, বললাম "আমার ছুটি নেবার কোন দরকার নেই, সফ্টওয়্যার ফার্মটা আমার নিজেরই।" এতক্ষণে সে আমার কথা বুঝতে পারল, চোখে কিছুটা বিশ্বয়, "ও তাহলেতো খুব টাকা ইনকাম করছেন।" "হা হা হা, ভালই বলেছেন"। তারপর অনেক কথা হল। একসময় বললাম, "আজ আর পড়া হবে না, আমি যাচ্ছি।"

চলে আসার পর মনে হল নামটা এখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। পরের দিন প্রথমে গিয়েই জিজ্ঞেস করব। মধ্যে শুক্র-শনিবার বন্ধ। এই দুইটা দিন ঘোরের মধ্যে কাটল, সারাক্ষণ কানের কাছে তার হাসির শব্দ বাজতে থাকল। টিনএইজের সেইসব দিনগুলি বারবার মনে পড়তে থাকল।

তৃতীয় দিনঃ
আজকে লাব্রেরীতে আসতে আর দেরি করলাম না। দেখলাম সে আমার আগেই এসে বসে আছে। দূর থেকে সেই প্রশস্ত হাসি দিল। আমিও যতটুকু সম্ভব বড় একটা হাসি দিয়ে স্বাগত জানালাম। লাইব্রেরীর কম্পিউটারগুলো খালি পড়ে থাকায় সময় থাকতে একটাতে বসে পড়লাম লিসেনিং টেস্ট দেবার জন্য। সেও দেখলাম আরেকটাতে বসে পড়েছে। আজ পেলাম ৩০। এতটা খারাপ হবে আশা করি নি। মনে মনে নিজের উপর বিরক্ত হলাম। ঠিক করলাম এখানে যে কাজে জন্য এসেছি তা না করে ধূমকেতু ধরতে গেলে আমার কপালে দুঃখ আছে। আমি তখন একটা চেয়ারে বসে পড়া শুরু করলাম। পাশের চেয়ারটা খালি ছিল। মনে মনে আশা করেছিলাম, কিন্তু দেখলাম সে আমার টেবিলে না এসে পাশের টেবিল একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। পুরনো কোন এক বন্ধুর সাথে কথাবার্তা বলছে।

কিছুটা অভিমান হয়েছিল, কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ল আজ ওই বন্ধুটার আর কোন পড়া হবে না। সময় থাকতে সাবধান হতে হবে, তা না হলে উচ্চতর শিক্ষার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। অতএব সেদিনের মত ধূমকেতু দর্শনের এখানেই পরিসমাপ্তি টানলাম আর মনে মনে Winnings এর সুরে সুরে বললাম, "ধূমকেতু হয়ে গেলে মোরে ছুয়ে, রয়ে গেলে হৃদয়ে জ্যোতিষ্ক হয়ে।"


বিঃদ্রঃ চতুর্থ দিন কিন্তু এখনও আসেনি, তাই জানিনা পরের গল্পটার শিরোনাম কি হবে।

Apr 21, 2008

জোটে যদি একটি পয়সা

পূর্বে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত


[পাস করবার পরে ৩ মাস মেয়াদী একটা বেকার জীবন কাটানোর সুযোগ হয়েছিলো। একেবারেই অন্যরকম একটা সময়। ছন্নছাড়া কিছু লিখতে ছন্নছাড়া সময়ের উদাহরণের চেয়ে ভালো কিছু হয় না। :p]
[১]
২০০৬ – জুন। আন-অফিসিয়ালী বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হল মাত্র। রেজাল্ট হয় নাই। আগামী ২০ দিনের করণীয় মনে মনে ঠিক করে ঢাকার বাসায় এসে ঢুকলাম। ৭ দিন বিশ্রাম, সাথে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘69’ নাটকের বাকি পর্বগুলো একটানা দেখে শেষ করব। বেশ কিছু জমে থাকা মুভী আছে। সিলেট থেকে আসবার আগে নাতির কাছ থেকে কমেডি সিরিজ “ফ্রেন্ডস” এর ৫টা ডিভিডি হার্ড-ডিস্কে কপি করে এনেছি। সেগুলোও দেখে শেষ করতে হবে। এর ফাঁকে কিছু সময় বের করে সিভি প্রস্তুত করব। বেশ কিছু আড্ডা পেন্ডিং আছে স্কুল বন্ধুদের সাথে। এরপরও কিছু সময় বেচে গেলে বিডিজবসে ঢুঁ মারা যাবে।

প্রথম তিনদিন-চারদিন রিপ ভ্যান উইঙ্ক্যালের মত ঘুম দিলাম। এরপর হৃষ্ট চিত্তে প্যাকেট খুলে কম্পিউটার জোড়া লাগাতে বসেছি। ফ্লোরে পড়ে আছে বড় বড় ৩ কার্টুন ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 4 বছর কারিকুলামের সব বই। প্যাকেট করা দেখলে এক ধরনের শান্তি শান্তি লাগে। তাই, ওভাবেই পড়ে থাকলো পরের ২ মাস।

কম্পিউটার লাগানোর পরপরই কুনো ব্যাঙের মত আলসে হয়ে গেলাম। সারাদিন শুয়ে শুয়ে ‘69’ দেখি। আরিফ, দিদার, মুকুল সবাই সিলেটেই এই নাটকের সেঞ্চুরী পূর্ণ করেছে। আমি ১৫-২০ পর্ব একসাথে দেখেছি। কিন্তু, পরীক্ষার মৌসুমের ২০-২৫ দিন বাকি থাকলেই রাত ১০টায় চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। তাই, লেট নাইট শো হিসেবে ওদের সাথে দেখা হয় নাই। চমৎকার অভিনয় সবার। হাসান ভাইয়ের গান, আহমেদ রুবেলের শুচিবায়ু, তিশার ন্যাকামী এবং তিন্নির প্রেম দেখতে দেখতে সময় উড়ে যেতে লাগলো। খুব শীঘ্রই ১০০ পর্ব শেষ হয়ে গেলো। তিশার মৃত্যুতে ব্যথীত হবার চেয়ে, এরপরে কি করবো তার চিন্তায় তখন জাবর কাটছি।

ততদিনে দেড় সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। মেইল চেইক করতে বসলে মরূর মধ্যে চিকচিকে পানির মত মাঝে-মধ্যে যখন ২-১টা মেইল আসেঃ “I joined...”, আমরা হুমড়ি খেয়ে মেইল পড়ে সেই বন্ধুকে অভিনন্দন জানাই। এরপর খানিকক্ষণ নিজেকে নিয়ে চিন্তার উদ্রেক হয়। অতঃপর আবার অন্য মেইলগুলোয় ডুবে যাই।

রাতের বেলা নিবিষ্ট মনে পেঁচার জীবনকে অনুসরণ করি। বিশ্বকাপ ফুটবল’০৬ চলছে। নিজ ঘরে টিভি ২৪/৭ অবস্থান নিয়েছে। আর্জেন্টিনা ১ম রাউন্ডে তুমুল খেলছে। প্রতিবার আর্জেন্টিনা যতক্ষণ টুর্ণামেন্টে টিকে থাকে, আমি ব্রাজিলের ঘোর-বিরোধি। বাদ পড়লেই ব্রাজিল সমর্থক হয়ে যাই। মেসিকে নিয়ে বিরাট হৈ-চৈ। আর্জেন্টিনার খেলা হলেই দেখা যায় ম্যারাডোনা গ্যালারীতে বসে “মেসি, মেসি” স্লোগাণ দেয়। এই মেসিকে ভালো না লেগে যাবে কোথায়?


[২]
উষ্ণ দিনগুলো দ্রুত কেটে যেতে থাকে। থিসিস প্রেজেন্টেশনের তারিখ হয়ে গেলো। অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ইউনিভার্সিটিতে সবাই উপস্থিত হয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়েও এলাম। বিডি-জবস.কম পরিনত হল ব্রাউজারের হোম-পেজে।

বেকার বেকার ভাবটা ততদিনে প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। সিভি ড্রপ করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নাই। কিছু ইন্টারভিউ দিলাম। কিন্তু, ব্যাট-বল মিলিয়ে জয়েনিং হচ্ছে না। রোজ সকালে ১০টায় ঘুম থেকে উঠি। এরপর রাজসিক ভাব নিয়ে নাস্তা করি। এরপর টুক-টাক কাজ, নাহলে ব্রাউজিং। বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া হয়েছে। দারুন সব সুবিধা। আইএসপির সার্ভার থেকে সরাসরি মুভী চালানো যায় রিয়েল প্লেয়ারে। হাজারখানেক মুভীর বিশাল এক লাইব্রেরী। মুভী ভালো না লাগলে কিছুক্ষণ হাই তুলে ঘুমের প্ল্যান করি। এহেন বয়ে যাওয়া দিনে তেমন কোনো অভাব অনুভূত হয় না। আম্মা এসে মানিব্যাগে একসাথে বেশ কিছু টাকা রেখে যায়। সাবলম্বী ছাত্র জীবন থেকে হঠাৎ করেই বেকার জীবনে প্রবেশ হেতু সেই টাকা শেষ হয়ে গেলেও বলতে ইচ্ছা করে না।

এক শুক্রবার সকালে মৌচাক গন্তব্য করে বের হচ্ছি। মানিব্যাগ খুলে দেখি একটা মাত্র ২০ টাকার নোট সগৌরবে উঁকি দিচ্ছে। যথেষ্ট মনে করে পকেটে মানিব্যাগ চালান দিলাম। রিক্সা ভাড়া দিয়ে মৌচাকে নেমেছি। কাজ প্রায় শেষ এমন সময় রূপম ভাইয়ের ফোনঃ

- ‘ওই রুমন! আজকের ডেইলী স্টার দেখসো?’
- ‘নোপ বস। বাসায় প্রথম আলো রাখি।‘
- ‘হুম! ডেইলী স্টার কিনে ফেলো। অমুখ কোম্পানীর বিরাট সার্কুলার দিসে।‘
- ‘ওকি-ডোকি! ঠ্যাং-স’।
- ‘নো প্রব! একদিন সময় দাও। তোমারে নিয়ে খাইতে বের হবো।‘ [রূপম ভাই সবসময় খাবারের শিডিউল করে। ]
- ‘আমি তো অলয়েজ ফ্রি।‘

একটা ডেইলী স্টার কিনে ফেললাম। রয়ে যাওয়া ২ টাকার নোট আবার পকেটে চালান দিয়েছি। সার্কুলার দেখতে দেখতে সেগুনবাগিচার দিকে হাঁটা দিবো নাকি ক্যালকুলেশন করছি, মোড়ে বাস পেয়ে গেলাম। পল্টন নেমে পকেটের শেষ কাগুজ নোটটাও দিয়ে দিলাম। সেগুনবাগিচার দিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে উচ্চ মার্গিক চিন্তা চলছে। কি মনে হল, খালি মানিব্যাগ বের করে আনলাম। ইউরেকা! মানিব্যাগের ছোট পকেটে ১ টাকা মূল্যের ১টি কয়েন!

হুবুহু এই সময়টা আর কখনো আসবে না; তাই, পরের ২ দিন ওইভাবেই রয়ে গেলাম। ঘরকুনো হয়ে থাকি, বাইরে বের হতে হলে শুধু ওই কয়েনটা নিয়েই বের হই। ঘুমিয়ে আছি, আম্মা এরমধ্যেই এক সকালে এসে এই অবস্থা দূর করে দিলেন।
*************

কাছের অনেক বন্ধুকেই অনুভূতিটা বলেছি, কেউ বুঝেছে, কেউ বোঝেনি। ১ মাস পর এখনকার অফিসে আমার জয়েনিং ডেট। এইচআর ডিপার্টমেন্টে বসে আছি, এক বন্ধু এসএমএস পাঠালো, “চিন্তা করে দেখ্‌! ওই এক টাকার সুখ আর কখখনো পাবি না! জয়েন করবি?? ঃ))”
*************
[সংক্ষেপিত।]

ছবিঃ  সিসিএল- এর নীতিমালার আওতায় ব্যবহৃত।

Feb 15, 2008

অবিশ্রান্ত স্মৃতির মিছিল

[ঈষৎ পরিবর্তিত]

পূর্বে প্রজন্ম ফোরামে প্রকাশিত

শাবিপ্রবি সমাবর্তন [৬ ডিসেম্বর, ০৭]



[১]
আবার পুরোনো শহরে সবাই একসাথে হলাম। পাস করবার পরে ২-৩ বার সিলেট গিয়েছি। কিন্তু, এইবারের মত এত নস্টালজিয়া কখনো চেপে ধরে নাই। নস্টালজিয়ার ধাক্কায় ভার্সিটির আনাচে-কানাচের ছবি পর্যন্ত তুলে ফেলি। “চায়ের টং”, “এখানে ময়লা ফেলুন”, “রোড টু ইনফিনিটি”, “ক্লাস-রুম”, “নোটিস বোর্ড”।

অবশ্য, অনেকেরই অবস্থা আমার মত। একসাথে জড়ো হওয়াতে মনে হচ্ছিল সবাই এখনো আগের মতই ছাত্র। অডিটোরিয়ামের দরজা খুললেই পরীক্ষা দিতে ঢুকবো।

শুধু মাঝখান থেকে কেটে গেছে দেড়টা বছর!




[২]
এইবার সিলেটে যাবার জন্যে ৩৪ জনের একটা ‘চিল্লা-চিল্লি’ গ্যাং গঠন করা গেলো। ট্রেনের বগিতে উচ্চ-কন্ঠ তানিম থাকাতে শুরু থেকেই সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম বেশ রাত পর্যন্ত দন্ত প্রদর্শন করা যাবে। যথারীতি, ঘন্টা-খানিকের মধ্যেই আমাদের বগি অন্য বগির যাত্রীদের মনোঃ-কষ্ট এবং ঘুম-কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ালো। টিকেট-চেকারের মাধ্যমে তারা হুমকি দিলো, চিল্লা-মিল্লি না থামাইলে ট্রেন অবরোধ করা হবে। শোনার পরে ৩০ সেকেন্ডের মত বগি অবশ্যি শান্ত ছিল।

প্রথম দিন পোস্টালের রেস্ট হাউসে উঠলাম। পরদিন সিলেটের মদিনা মার্কেট। সিলেটে আমরা যারা ৯/বি, পাঠানটুলায় থাকতাম, তাদের জন্যে চাচার টং ছিল ফরজীয় লেভেলের রুটিন। ‘ফুটপাত হকার উচ্ছেদ অভিযানের’ অংশ হিসেবে সেই বড় টং আর নেই। তার বদলে চাচার ‘চ্যাং টং’ এখন ছোট্ট একটি দোকান হয়ে ঠিক আমাদের ৯/বি বাসার গেটের পাশেই আশ্রয় নিয়েছে। মদিনা মার্কেটে নেমেই বাসায় ঢুকবার আগে চাচার খোঁজ নিলাম। ভালোই আছেন। সেদিন রাতেই ছোট আরেকটা আড্ডা বসে গেল। অপরিহার্য সূরা সদস্য সিনিয়র শামসীর & রসি ভাই সহ!




[৩]
সিলেটে আমি যে রুমে থাকতাম সেখানে এখন ফিজিক্সের রাজী থাকে। প্রতিবার ঢুকলেই একটা ধাক্কা মত খাই। শুধু সময়, মানুষ আর কিছু বাড়তি জিনিস বদলে গেছে। দেয়ালের সাথে দেয়াল-ঘড়িটা সেই একই আছে। এই ঘরের ফ্লোরের প্রতি ইঞ্চিতে নিজ পদ-চিহ্ন। বারান্দার গ্রিল দিয়ে এক ঝলক রাস্তা আর এই চোখের স্মৃতিও অভিন্ন।

বারান্দায় গেলেই অদ্ভুত কিছু স্মৃতি নাড়া দেয়। তৃতীয় বর্ষে থাকতে রাস্তার উলটো পাশের চটপটি দোকানে খেয়ে জন্ডিস বাঁধালাম। দেড় মাস ঢাকায় থেকে সুস্থ হয়ে যখন ফেরত আসছি তখনও শরীর কিছুটা দূর্বল। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে ৫/৬ দিন বাকি। ইন্ড্রাষ্টিয়াল আর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্যে চোখে অন্ধকার দেখছি (চশমা সহ)। এই সময় আমার সঙ্গী হিসেবে বারান্দায় আবির্ভূত হল একটি কবুতর। ২০ মিনিটের মধ্যে চাল দিয়ে এটাকে পোষ্‌ মানিয়ে ফেললাম। ঘরের জানালায় সে আশ্রয় নিল। কবুতরটা বৃদ্ধ, সাথে ঘুম-কাতুরে ছিল। হয় ঘুমাতো নাহয় ঢুলু ঢুলু চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত। ইন্ড্রাষ্টিয়াল পড়তে পড়তে যখনই বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছাতাম, তখন আমিও দরজায় হেলান দিয়ে কবুতরের পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতাম। দুপুরের কড়া রোদ কিংবা বিকালের শেষ আলো কিছুই আমাদের বিরক্ত করতো না। বারান্দায় গিয়ে দাড়ালেই ওটার কথা মনে হয়।

বড় বারান্দায় এইবারও ভাঙ্গা চেয়ারটাকেই পেলাম। এই চেয়ারের বয়স কমপক্ষে ৭ বছর। রূম-মেট সাফায়েত কিনেছিল। ওরা অস্ট্রেলিয়া চলে যাবার পরে চেয়ারটির জায়গা হয় বারান্দায়। ঝড় হোক বা বৃষ্টি-- এটাতে বসেই আমাদের মেসের নওজোয়ান সদস্যরা ডিজুসের ফ্রি মিনিটের সর্বোত্তম ব্যবহার করত। গ্রামীণ ফোণ কর্তৃপক্ষ যদি চেয়ারটির আত্ম-ত্যাগের কাহিনী শুনতেন তাহলে নিশ্চয়ই লোগোর অল্প একটু জায়গা জুড়ে এটি স্থান পেত।

সিলেটে এই প্রথম ট্যুর যেবার ২-কে ব্যাচের ‘নাতি’র সাথে দেখা হল না। বহুবার, বহুসময় ঈদগা সংলগ্ন সেই বাসায় গিয়েছি। কিন্তু, ওর বাবা মারা যাবার পরে এই প্রথম যাওয়া। বাসাটা পুরো খালি হয়ে আছে। একধরনের নিঃসঙ্গতা বোধ করলাম ওর বাসায় গিয়ে।



[৪]
৫ তারিখ খুব সকালেই গাউন আর আইডি কার্ডের জন্য ভার্সিটি গিয়ে আমরা হাজির। সোহাগ আর ফেকুকে এত সকালে ঘুম থেকে তোলা যাবে প্রথমে কেউ আশা করি নাই। অফিস জীবন সবাইকেই কিছু পরিবর্তন করেছে। ৮ টার মধ্যে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে!!

লাইনে দাড়ানো মাত্রই ফটো-সেশন শুরু হল। যথারীতি ধাক্কা-ধাক্কি করে লাইনে সবাই নিজের অবস্থান
পুনঃপুনঃপ্রতিষ্ঠিত করল। গাউন জোগাড় হবার পরে ক্লাসমেট তানভীর ‘স্যারের’ দর্শন নিতে রওনা দিলাম। দর্শন শেষে নিচে নেমে জাফর স্যারের সাথে ফটো-সেশন। সাথে টুকরো, টুকরো আড্ডা তো চলছেই।

পরদিন সমাবর্তন। দেড় ঘন্টা rally লাইনে দাঁড়িয়ে একজন rally sort algorithm আবিষ্কার করে ফেললো। এরপর দুই ঘন্টা চেয়ারে বসে ঝিমোবার পরে রাষ্ট্রপতি মহোদয় আসলেন। আমরা গ্রাজুয়েট ঘোষিত হলাম। এরপর শুধু ক্যামেরার শাটারের শব্দ মনে পড়ছে। শেষ বিকেলে সিনিয়রদের সাথে আড্ডাটা অনেকেরই মনে থাকবে। জহির স্যার কিংবা তৌফিক ভাইদের মত বুড়োদের সাথে লম্বা আড্ডা হল।

কনভোকেশন রাতে আমরা ফেয়ারওয়েল পার্টিতে জড়ো হলাম সিলেটের চৌহাট্টার আল-হামাদান রেষ্টুরেন্টে। বিদায় ঘন্টা ক্ষীণ স্বরে বাজতে শুরু করেছে। অনেকের অফিস শনিবার! ছাত্রত্ব অনুভূতি ত্যাগ করে আবার কর্মস্থলে ঢুকতে হবে। বৃহস্পতিবার রাতেই তারা সিলেট ছেড়ে রওনা দিলো।

পরদিন ইউনিভার্সিটিতে সার্টিফিকেট তুলবার পরে বিশ্বদার সাথে দেখা। ডি-বিল্ডিং এর সামনে ভাবীকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। সামনে যাবার পরেই বললেন, ‘সুনামগঞ্জে যখনই আসি, ফেরত যাবার পথে রিক্সা করে ইউনিভার্সিটিতে একবার ঢুঁ মেরে যাই। গোল চত্বর থেকে এ-বিল্ডিং একবার রিক্সা দিয়ে ঘুরেই ভার্সিটি থেকে বের হয়ে পড়ি। রিক্সা থেকে নামি না। অথচ এইবার যেতে ইচ্ছা করছে না।’



[৫]
“Just like before
It’s yesterday once more”


সিলেট জীবনটাই ছিল অন্যরকম। যারা বাইরে থেকে সিলেটে প্রথমবার গিয়েছিলাম, তাদের কাছে অনেকটা হিজরত করার মত ব্যাপার। চেনা একটি শহর ছেড়ে অচেনা অন্য শহরে যাওয়া। সমাবর্তনের ২টি দিন শুধু সেই অচেনা শহরে ছয় বছর কাটানো সময়ের স্মৃতিময় ঝলকানি।

ভার্সিটির প্রথম (২০০১) এবং শেষদিন (২০০৬) এখনও অনায়াসে মনে পড়ে। বড় অডিটোরিয়ামে গিয়ে সবাই জড়ো হয়েছি। পার্থ স্যার এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে লেকচার দেওয়া শুরু করেছে। একটু পরে জাফর স্যার এসে হাজির। বেড়াল মারার গল্প, সাথে ভারী ভারী কিছু কথা। বের হয়ে নতুন মেস সুরমায় চলে গেলাম। স্বাধীন জীবনের শুরু। মেসের ২/৩ জন মিলে চলে যাই আম্বরখানায় [মদিনা মার্কেট তখন শূন্য]। প্রয়োজনীয় হাড়ি-পাতিল কিনে আনি। রাতে বসে একনাগাড়ে এলোপাথাড়ী গল্প।

আর শেষদিন বড় অদ্ভুত। ইউনিভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি থিসিস প্রেজেন্টেশনের জন্যে। তারিখ পিছিয়ে পরের মাসে গেলো। যে যার মতো ফিরে আসলাম নিজ পিতৃস্থলে। শুরু এবং শেষটা একইরকম হল। যে যার মতো বিচ্ছিন্নভাবে সিলেটে গিয়েছিলাম, বিচ্ছিন্নভাবেই শেষবারের মত চলে এসেছি।

এর ঠিক দেড় বছর পর সমাবর্তনে আবার সবাই একসাথে হয়েছি। ভার্সিটি অনেক সুন্দর সাজিয়েছে। যেখানেই ঢুঁ মারি সেখানেই স্মৃতিও ছায়ার মত সাথে সাথে ঢুঁ মারে। কে যেন প্রথমদিন জিজ্ঞাসা করল, “ওই বড় টয়লেট চাপসে! কোনটাতে যামু রে?” একটু চিন্তা করে কোনো সন্দেহ ছাড়াই ৩১০ নম্বর রূমের উত্তর পাশের টয়লেটে যাবার পরামর্শ দিলাম। সমাবর্তনের পরদিন ১ম বর্ষেই ইন্ডিয়া এক্সপোর্টেড সমিত আসলো সিলেটে। ফোনে ওকে রাস্তা-ঘাট চেনাতে হল!! এরপর মেডিকেলের উল্টোদিকে রেষ্টুরেন্টে আড্ডা দিলাম।

সাত তারিখ রাতে বড় একটা গ্রুপ ঢাকায় ফেরত আসছে। বাস স্টেশনে গিয়েছি ওদের সিলেট থেকে আবার বিদায় দেবার জন্যে। এরমধ্যে দেখি রাজী আর নায়েম ভাই গাড়ী নিয়ে হাজির। খাদেম ব্রীজে যাবে। রওনা দিলাম ১১.৩০ টার দিকে। ব্রীজে যখন পৌছলাম তখন রাত ১২.৩০। পাশেই সুরমা নদী। তিনজনই শীতের মধ্যে লম্বা হয়ে ব্রীজের ফুটপাতে শুয়ে পড়লাম। ‘তারকা-স্নান’ বলে বাংলায় কোনো শব্দ আছে কিনা জানি না। তবে, তারাগুলো হাত বাড়িয়ে ধরতে কোনোমতে বাকি রেখেছিলাম।

Carpenters এর পুরোনো, অসম্ভব সুন্দর একটা গান আছে, স্মৃতি-জাগানিয়া টাইপের। স্মৃতি-চারণের সব গল্পই সম্ভবত অসমাপ্ত ধরণের হয়ে থাকে। একে যতিচিহ্ন দিয়ে পূর্ণ সমাপ্তি দেওয়া যায় না। চলতে থাকা এই বিচ্ছিন্ন গল্পগুলোও নাহয় “ইয়াস্টারডে ওয়ান্স মোর” এর আরেকটি সাক্ষী হয়ে থাকুক।।

Those were such happy times
And not so long ago
How I wondered where they'd gone
But they're back again
Just like a long lost friend
all the songs I loved so well....

Jan 24, 2008

সমাবর্তন-৫: Yesterday once more...



Just like before
 It’s yesterday once more


সিলেট জীবনটাই ছিল অন্যরকম। যারা বাইরে থেকে সিলেটে প্রথমবার গিয়েছিলাম, তাদের কাছে অনেকটা হিজরত করার মত ব্যাপার। চেনা একটি শহর ছেড়ে অচেনা অন্য শহরে যাওয়া। সমাবর্তনের ২টি দিন সেই অচেনা শহরে ছয় বছর কাটানো সময়ের স্মৃতিময় ঝলকানি।

ভার্সিটির প্রথম (২০০১) এবং শেষদিন (২০০৬) এখন অনায়াসে মনে পড়ে। বড় অডিটোরিয়ামে গিয়ে সবাই জড়ো হয়েছি। পার্থ স্যার এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে লেকচার দেওয়া শুরু করেছে। একটু পরে জাফর স্যার এসে হাজির। বেড়াল মারার গল্প, সাথে ভারী ভারী কিছু কথা। বের হয়ে নতুন মেস সুরমায় চলে গেলাম। স্বাধীন জীবনের শুরু। মেসের ২/৩ জন মিলে চলে যাই আম্বরখানায় [মদিনা মার্কেট তখন শূন্য]। প্রয়োজনীয় হাড়ি-পাতিল কিনে আনি। রাতে বসে একনাগাড়ে এলোপাথাড়ী গল্প।

শেষদিন বড় অদ্ভুত। ইউনিভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি থিসিস প্রেজেন্টেশনের জন্যে। তারিখ পিছিয়ে পরের মাসে গেলো। যে যার মতো ফিরে আসলাম নিজ পিতৃস্থলে। শুরু এবং শেষটা একইরকম হল। যে যার মতো বিচ্ছিন্নভাবে সিলেটে গিয়েছিলাম, বিচ্ছিন্নভাবেই শেষবারের মত চলে এসেছি।

এর ঠিক দেড় বছর পর সমাবর্তনে আবার সবাই একসাথে হয়েছি। ভার্সিটি অনেক সুন্দর সাজিয়েছে। যেখানেই ঢুঁ মারি সেখানেই স্মৃতিও ছায়ার মত সাথে সাথে ঢুঁ মারে। কে যেন প্রথমদিন জিজ্ঞাসা করল, ওই বড় টয়লেট চাপসে! কোনটাতে যামু রে? একটু চিন্তা করে কোনো সন্দেহ ছাড়াই ৩১০ নম্বর রূমের উত্তর পাশের টয়লেটে যাবার পরামর্শ দিলাম। কনভোকেশনের পরদিন ১ম বর্ষেই ইন্ডিয়া এক্সপোর্টেড সমিত আসলো সিলেটে। ফোনে ওকে রাস্তা-ঘাট চেনাতে হল!! এরপর মেডিকেলের উল্টোদিকে একটা রেষ্টুরেন্টে আড্ডা দিলাম।

সাত তারিখ রাতে বড় একটা গ্রুপ ঢাকায় ফেরত আসছে। বাস স্টেশনে গিয়েছি ওদের সিলেট থেকে আবার বিদায় দেবার জন্যে। এরমধ্যে দেখি রাজী আর নায়েম ভাই গাড়ী নিয়ে হাজির। খাদেম ব্রীজে যাবে। রওনা দিলাম ১১.৩০ টার দিকে। ব্রীজে যখন পৌছলাম তখন রাত ১২.৩০। পাশেই সুরমা নদী। তিনজনই শীতের মধ্যে লম্বা হয়ে ব্রীজের ফুটপাতে শুয়ে পড়লাম। তারা-স্নান বলে বাংলায় কোনো শব্দ আছে কিনা জানি না। তবে, তারাগুলো হাত বাড়িয়ে ধরতে কোনোমতে বাকি রেখেছিলাম।

Carpenters এর পুরোনো, অসম্ভব সুন্দর একটা গান আছে, স্মৃতি-জাগানিয়া টাইপের। স্মৃতি-চারণের সব গল্পই যেহেতু অসমাপ্ত থাকে, এই চলতে থাকা গল্পগুলোও নাহয় টু বি কনটিনিউড হয়ে থাকুক।।

When I was young
I'd listen to the radio
Waitin' for my favorite songs
When they played I'd sing along
It made me smile.
 
Those were such happy times
And not so long ago
How I wondered where they'd gone
But they're back again
Just like a long lost friend
All the songs I loved so well...


[সমাপ্ত]